‘গ্রামের লোককে গুলি করে ওপারে ফেলে দিয়ে আসছে BSF’-বিস্ফোরক দাবি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের

বুধবার নবান্নের একটি প্রশাসনিক বৈঠকে বিএসএফের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ করেন রাজ্যের মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এইদিন নবান্নে হওয়া সেই প্রশাসনিক বৈঠকে বিভিন্ন জেলার প্রশাসনিক অধিকারী ও পুলিশ কর্তাদের সাথে কথা বলেন তিনি। তখনই বিএসএফের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ করেন তিনি। বিভিন্ন জেলার পুলিশ কর্তাদের সামনে তিনি দাবি করেন,“গ্রামের ভিতরে ঢুকে মানুষজনকে গুলি করে ওপারে ফেলে দিচ্ছে বিএসএফ। বিষয়টি নিয়ে এখনও বি এস এফের তরফ থেকে কোনো মন্তব্য করা হয়নি।”
বুধবার আধিকারিক ও পুলিশ কর্তাদের সাথে কথা বলার সময় মুখ্যমন্ত্রী যখন কোচবিহারের পুলিশ কর্তার সাথে কথা বলতে শুরু করেন তখনই বিএসএফের এই প্রসঙ্গটি তোলেন তিনি। বিএসএফের বিষয় নিয়ে কোচবিহারের পুলিশ কর্তাকে সতর্ক করে দেন মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য ছিলো, “তুমি একটা জিনিস লক্ষ্য রেখো, তোমাদের (অনুমতি) ছাড়া ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত বিএসএফকে ঢুকতে দেবেনা। তার কারণ হচ্ছে ওরা ঢুকেই গ্রামের লোককে গুলি করছে এবং ওপারে ফেলে দিয়ে আসছে। এরকম অনেক কেস আমাদের কাছে এসেছে। কোচবিহারে পরপর এরকম ঘটনা ঘটেছে।” একই সাথে তিনি বলেন, “বিএসএফকে বলো, ওরা যা আপারেশন করবে, স্টেট পুলিশকে জানিয়ে করবে।”
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য গত বছর কোচবিহারের সিতাইতে বিএসএফের গুলিতে কয়েকজন মারা গিয়েছিলেন। সেই সময় থেকেই এই ঘটনা নিয়ে মূলত রাজনৈতিক চাপানউতোর শুরু হয়ে যায়। গতবছরের সেই ঘটনার রেশ ধরে মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী বলতে থাকেন, “এপারে মেরে ওপারে ফেলে দেয়, আগের কেসটাই তাই করেছিলো। লোকটা কোচবিহারের ছিলো, বাংলাদেশের ছিল না। তোমরা আমায় প্রথম রিপোর্ট পাঠিয়ে ছিলে যে বাংলাদেশের ছিল, না বাংলাদেশে ফেলে দিয়ে এসেছিল। তোমরা জানো একবার চারজনকে মেরে জলপাইগুড়িতে ফেলে দিয়ে চলে গিয়েছিল। কিন্তু আমি ধরেছিলাম। কারণ আমি রেলমন্ত্রী ছিলাম, আমি জানি ডেড বডি কীভাবে ফেললে তার কী আকার হয়। হাতেনাতে ধরে ছিলাম। জলপাইগুড়ির দুর্ঘটনা নয় এটা।”
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, গত বছর সিতাইয়ে বিএসএফের গুলিতে একাধিক ব্যক্তির মৃত্যু হওয়ার পর সীমান্তের ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত এলাকায় বিএসএফের প্রবেশের ছাড়পত্র দেওয়ার ঘটনা নিয়ে বিতর্ক দানা বাঁধতে শুরু করে। বিএসএফের এক্তিয়ার বৃদ্ধি যাতে না হয় সেই জন্য পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার শীতকালীন অধিবেশনে প্রস্তাবও পাশ হয়েছিলো। এরপর এই বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছে উত্থাপনও করেছিলেন মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী। প্রশাসনিক কর্তাদেরকে সতর্ক করে তিনি বলেছিলেন,“ কয়েকটি জেলা বিশেষত মুর্শিদাবাদ, মালদা, উত্তর দিনাজপুর, দক্ষিণ দিনাজপুর- প্রচুর বিএসএফ… ওরা করে কী, ওদের ১৫ কিলোমিটার আসার কথা, সেটাও পুলিশকে জানিয়ে। কিন্তু পুলিশকে না জানিয়ে যেখানে সেখানে ঢুকে যায়।” এমনকি প্রয়োজনে ঘটনাস্থলে গিয়ে বিএস এফকে এক্তিয়ার বুঝিয়ে দেওয়া উচিত বলেও সেইবার প্রশাসনের কর্তাদের সতর্ক করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী।