বাংলা সিরিয়াল

‘খলনায়ক খলনায়িকাদের কাছে ভিলেন হয়ে ওঠার পেছনে একটা যুক্তি থাকে’, বাংলা সিরিয়ালের ‘রানী কটকটি’র অকপট যুক্তি নিজের চরিত্র সম্পর্কে

বাংলা ধারাবাহিকের(Bengali Serial) খল চরিত্রগুলি নায়ক নায়িকার মতই আমাদের কাছে জনপ্রিয়। তেমনই এক অত্যন্ত পরিচিত মুখ চান্দ্রেয়ী ঘোষ(Chandreyee Ghosh)। অন্যান্য চরিত্রের পাশাপাশি চরিত্রই তাকে বেশি দেখা যায়। আর সত্যিই ভিলেন(Villain) চরিত্র যেন তাকে লাগে যথার্থ। কিন্তু নিজের চরিত্রগুলি নিয়ে ঠিক কতটা খুশি বা অখুশি অভিনেত্রী? সম্প্রতি জনপ্রিয় টিভি নাইনে শুরু হওয়া নতুন সিরিজে ‘নায়ক নেহি খলনায়ক হু মে’তে ধরা দিলেন অভিনেত্রী। সেখানেই বললেন খলনায়ক-খলনায়িকার চরিত্রের সংঙ্গা।

অভিনেত্রীর কথা অনুযায়ী,’ খলনায়ক বা খলনায়িকা চরিত্রের মধ্যে আমি সবার আগে যে বিষয়টা দেখি তা হল মানুষটির বা চরিত্রটির মোটিভটা কী? সে কি চায়? একটা মানুষের জীবন তোর চাওয়া-পাওয়ার মধ্যে দিয়েই এগোয়। আমি খোঁজার চেষ্টা করি তাদের পয়েন্ট টা কি। কারণটা কী? যার জন্য তারা বিশ্বাসের সঙ্গে এমনটা করে। নির্ভর করে আমি চরিত্রটাকে কিভাবে গ্রহণ করছি। তার বাকি চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য গুলো বোঝার চেষ্টা করি। চরিত্রের জীবনের খামতিটা বোঝার চেষ্টা করি। একজন খলনায়ক বা খলনায়িকার জীবনের তো অনেক গল্প থাকে। সেই স্ট্রাগলটা জানা জরুরী বলে আমি মনে করি। প্রতিটা নায়ক নায়িকার বা খলনায়ক খলনায়িকার স্ট্রাগলের পেছনে আসল কারণটা লুকিয়ে থাকে। তাই আমি মনে করি খলনায়ক বা খল নায়িকাদের কাছে এই ভিলেন হয়ে ওঠার পেছনে একটা যুক্তি থাকে।

এরপর যখন তাকে জিজ্ঞাসা করা হয় ছোট পর্দার খলনায়ক খলনায়িকাদের কোথাও ক্লান্তি নেই? সে ক্ষেত্রে সোজাসুজি উত্তর দেন,’এক্ষেত্রে বলব, জীবনদর্শনটাও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। খলনায়ক বা খলনায়িকার একটা আলাদা ক্ষমতা থাকে। সেই ক্ষমতার জায়গাটাও খুব চমকপ্রদ। আদৌ তাদের হাতে ক্ষমতা থাকছে কি না থাকছে না, তার থেকেও বড় হয়ে ওঠে তাঁদের বিশ্বাস যে, এটা আমার। এটা আমার প্রাপ্য। সবের ওপর একটা কন্ট্রোল। সবটা তাদের মনের মতো হবে, এমন একটা বিশ্বাস। বিশেষ করে ধারাবাহিকে এমনটাই হয়। তখনই তৈরি হয় মতবিরোধ। যখন দেখা যায় একজনের পছন্দ-ভাললাগা এমন দিকে যাচ্ছে, যেখানে সে ক্রমে মরিয়া হয়ে উঠছে নিজেকে যোগ্য প্রমাণ করতে, ছিনিয়ে নিতে, তখনই বিষয়টা পাল্টে যেতে থাকে’।

এই যে ভিলেন এই জিনিসটাকে সব চরিত্রের সঙ্গে খাটে? সে ব্যাপারে অবশ্য জানতেই মনে করেন জীবন মানুষকে এমন কিছু পরিস্থিতিতে পরীক্ষা নেয় যেখানে জীবনের মানেটাই পাল্টে যায় ব্যক্তিবিশেষে। হয়তো খুব ছোট ছোট বিষয় দেখানো হয় কিন্তু দিনের শেষে মানুষ এমন অনেক পরিস্থিতিতে কিছু করে বসে থেকে কেউ আশা করেনা। তার কথা অনুযায়ী,’ধারাবাহিকে হয়তো খুব সহজ, ছোট্ট-ছোট্ট বিষয় দেখানো হয়, যেমন, কেউ নুন মিশিয়ে খুশি, কেউ আবার জল ফেলে দিচ্ছে, আমি কিন্তু ধারাবাহিকের বাইরে বেরিয়েই এই উত্তরটা দিচ্ছি। দিনের শেষে তো মানুষ, অনেক পরিস্থিতিতেই এমন কিছু করে বসে, যা হয়তো তাঁর থেকে কেউ আশা করেনি। আমরা অনেক সময় বলি দেখবেন, ‘এ বাবা, ও ওটা করে ফেলল? ওর কাছ থেকে এটা আশা করিনি।’ ফলে মানুষের ইনসিকিওরিটির জায়গাটায় আঘাত করলে কিছু মানুষ সেটাকে সুন্দরভাবে সামলে নিতে পারেন, তবে অনেকেই আছেন যাঁরা পারেন না। তাঁরা ছটফট করে ওঠেন। তাঁরা চিৎকার করে ওঠেন। আবার দাবিও ফলাতে থাকেন। ‘আমি কেন পাব না’, ‘আমি কেন পারব না’, ‘আমি কেন নই…’ এই পাওয়া, না-পাওয়ার ব্যালান্সটা একটা মানুষ জীবনে এক-এক রকমভাবে সামাল দেন। তখনই অনেকে এই ভিলেন তকমাটা পেয়ে যায়। অত বড় কিছু হয়তো তিনি করলেন না, কিন্তু পরিস্থিতি তাঁকে এমন জাঁতাকলে ফেলে দিল যে, সে নিজেও বুঝল না এটা কী হচ্ছে…। তাঁর কাছে নিজের সাপেক্ষে থাকা যুক্তিটুকুই সম্বল হয়ে দাঁড়ায়’।

কিন্তু যেমন ভাবে লেখা হয় সেখানে কি সুখ্যতা বজায় রাখা হয় এমনটা কি সত্যি মনে করেন যে চান্দ্রেয়ী? জানালেন,’ধারাবাহিকের চরিত্রের একটা কন্টিনিউটি থাকে। এক-একটা পথ ধরেই এক-একটা চরিত্র এগোতে থাকে। সেটাই সিরিয়ালে মূলত দেখে থাকি। এবার ফিরি ব্যক্তি জীবনে, ধরুন আমি বা আপনি কাউকে অজান্তেই হয়তো কষ্ট দিয়েছি। হয়তো এমন কিছু করেছি যেটাতে পরেও আমরা অনুতপ্ত বোধ করছি, সেখানে আমি সেই ব্যক্তিটার জীবনে ভিলেন হলাম কি হলাম না, সেটা খুব প্রাসঙ্গিক। ধারাবাহিকের ক্ষেত্রে কিন্তু তেমনটা নয়। সেখানে দেখা যায়, ভিলেনরা ধারাবাহিকভাবেই হয়তো কারও ক্ষতি করার চেষ্টা করছে বা জেনেই অন্যায় করে চলেছে’।

বর্তমানে শোনা যায় সেই রকম দাপুটে খলনায়ক খলনায়িকা চরিত্র নাকি আর এখন সিরিয়ালে সেভাবে দেখা যায় না। যদিও অনেকেই এটা মনে করেন কিন্তু চান্দ্রেই এটা বিশ্বাস করেন না। বললেন,’দাপুটে চরিত্রের অভাব খুঁজে পাচ্ছি, এটা বলব না। যেটা বলা চলে, সেটা হচ্ছে যে, ছোটপর্দায় খলনায়ক বা খলনায়িকার একটা এক্সট্রিম ভার্সান দেখানো হয়। রিয়েল লাইফে তো একটা মানুষের জীবনে অনেকগুলো স্তর থাকে। পর্দায় মূলত ‘খল’ বিষয়টার ওপরই জোর দেওয়া হয় এই ধরনের চরিত্রের ক্ষেত্রে। মানে অধিকাংশ ধারাবাহিকেরই এটাই ছক। আর সঙ্গে কিছু ছকভাঙা চরিত্র তো থাকেই।’

কিন্তু যেখানে অন্যরা বারবার খলনায়ক খলনায়িকা চরিত্র করতে করতে হাঁপিয়ে ওঠেন সেখানে অভিনেত্রী বেশ দাঁড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করেন তার চরিত্রটিকে। জানিয়েছেন,’আমি উল্টে খুব আনন্দের সঙ্গে নেগেটিভ চরিত্র করে থাকি। আমার এই ধরনের চরিত্রকে উপস্থাপন করতে ভালই লাগে। প্রতিটা মুহূর্তে নিজের ভিতর একটা যুদ্ধ চলে। ভাল-মন্দ, ঠিক-ভুল, ন্যায়-অন্যায়… এক অদ্ভুত অস্থিরতা কাজ করতে থাকে। নায়ক-নায়িকার পাশাপাশি এই যে, আমি-ই সব, এটাকে প্রমাণ করার একটা বাড়তি তাগিদ থাকে। এইটা আমার কাছে খুব চ্যালেঞ্জিং। মানবিক দিকটাকে তোয়াক্কা না করে লক্ষ্যটা এমনভাবে স্থির করে ফেলা, যে সে ওই পথেই হাঁটবে। আর অন্য কোনও বিষয় সে ভাবতে রাজি নয়। যে দর্শক দেখছেন, তার মনে এই চরিত্রের ক্ষমতার প্রতি সেই বিশ্বাস যোগানোটাও কঠিন’।

পাশাপাশি জানালেন কটকটি চরিত্রে অভিনয়ের সময় একাধিক মজার ঘটনা রয়েছে। ছেলে মেয়ের মাইরা নাকি তাকে এসে ধন্যবাদ জানিয়ে যেতেন খাওয়ানো ,পড়তে বসানো খুব সহজ হতে বলে। তবে এই সমাজের মধ্যে কাকে ভিলেন মনে করেন চান্দ্রেয়ী? এই প্রশ্ন যখন রাখা হয় তখন তিনি জানান, সমাজের একপেশে চিন্তাভাবনাকে তিনি ভিলেন মনে করেন। সবকিছুই যখন পাল্টাচ্ছে যখন সব প্রকৃতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে সবার বদলানো উচিত। ধারাবাহিক কিছু নিয়ম যেগুলি জন্মের পরপর থেকেই এগিয়ে আসছে যেগুলি অন্য কিছু বাড়তে সাহায্য করছে না এই এক পেশে জীবন দর্শন এক পেশে চিন্তাভাবনাকে প্রগতির পথে ভিলেন মনে করেন চান্দ্রেয়ী।

তবে ব্যক্তি জীবনে তেমন কোন ভিলেনের সাক্ষাৎ আপাতত পাননি অভিনেত্রী জানালে নিজের মুখেই। এমন কিছু কিছু ঘটনা তার সঙ্গে ঘটেছে যার জন্য কষ্ট পেয়েছেন আবার পরবর্তীতে বোঝার চেষ্টা করেছেন যে কেন সে এমনটা করেছে। হয়তো কোন অক্ষমতা থেকেই রাগে করে ফেলেছেন। মাঝেমধ্যে এই বিষয়গুলো সমস্যার সৃষ্টি করে ঠিকই কিন্তু জীবনে এভাবেই এগিয়ে এসেছেন চান্দ্রেয়ী।

Related Articles