মন্দিরের চাঁদা দিতে অক্ষম দলিত যুবককে থুতু ছিটিয়ে নাকখত দিতে বাধ্য করলো খাপ পঞ্চায়েত

অনেকেই হয়তো ভাবেন খাপ পঞ্চায়েত,সেখানে একতরফা বিচার, ঘৃণ্য শাস্তি- এইসব ঘটনা শুধু সিরিয়ালেই হয়, কিন্তু না এখনো গ্রামের দিকে খাপ পঞ্চায়েত বসে এবং সেখানে অদ্ভুত সব নিদান হাঁকা হয় সম্প্রতি উড়িষ্যাতেই এই রকম একটি ঘটনা ঘটেছে।
দুবেলা যার অন্নসংস্থানই হয় না, তার আবার মন্দির তৈরির চাঁদা! – এমন অবস্থায় স্বাভাবিকভাবেই যে কেউ পুজোর চাঁদা দিতে অপারগতার কথা জানাবে, এমনটাই জানিয়েছিলেন দলিত ঐ যুবকও। কিন্তু ফল স্বরূপ তাকে শাস্তিও পেতে হলো। স্থানীয় সরপঞ্চ পুজোর চাঁদা চেয়েছিল তার কাছ থেকে, চাঁদা দিতে না পারায় গ্রামশুদ্ধ সবার সামনে ঘৃণ্য শাস্তি ভোগ করলেন যুবক!
উড়িষ্যার কেন্দ্রপাড়া জেলার তিখরি নামের একটি গ্রামে দলিত একটি যুবকের কাছে মন্দির তৈরির চাঁদা হিসেবে ৫০০ টাকা চাঁদা চেয়েছিলো সরপঞ্চ স্থানীয় সরপঞ্চ চামেলি ওঝা। যুবক জানায়,তার কাজ নেই বর্তমানে, দুবেলার খাবার যোগাড় করতেই হিমশিম খাচ্ছে সে, তারওপর কিছুদিন আগেই গ্রামের পূজোর মূর্তি কেনার জন্য নিজের সামান্য সংস্থান থেকেই সে টাকা দিয়েছিলো। কিন্তু এখন মন্দির তৈরির টাকা তার পক্ষে দেওয়া অসম্ভব। – নিজের এই অপারগতার কথা জানাতেই সরপঞ্চের তরফ থেকে তাকে জোর করা হয় টাকা দেওয়ার জন্য, এরপর শুরু হয় কথা কাটাকাটি এবং বচসা।
ওই যুবক অভিযোগ করেছে যে, এই বচসার পরই তার বিরুদ্ধে খাপ পঞ্চায়েত বসায় সরপঞ্চ। সেখানে পুরো একতরফা বিচার করে শাস্তি স্বরূপ নিদান দেওয়া হয় যে,নিজেই থুতু ছিটিয়ে তার ওপর নাকখত দিতে হবে ওই দলিত যুবককে। এরপর সকলে মিলে একপ্রকার জোর করে তাকে সেই ঘৃণ্য কাজটি করতে বাধ্য করে। এমনকি সবথেকে আশ্চর্যজনক ব্যাপার হলো গ্রামবাসীদের মধ্যে কেউ যেমন প্রতিবাদ করেননি তেমনি গোটা ঘটনার কথা স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের কেউ জানতেও পারেনি।
এরপর ঐ যুবক থানায় অভিযোগ দায়ের করতে চায় কিন্তু সাথে সাথে অভিযোগ নেওয়া হয়নি বলে ঐ যুবক অভিযোগ করে। স্থানীয়রা দাবি করেছেন, প্রথমে ওই অপমানিত ও লাঞ্চিত ঐ যুবকের এফআর নিতে অস্বীকার করে পুলিশ। গত রবিবার থেকে টানা অভিযোগ জানানোর দাবি জানিয়ে আসার পর শেষমেষ মঙ্গলবার পুলিশ অভিযোগ জমা নিয়েছে। যদিও পুলিশের তরফ থেকে বলা হয়েছে যে, তারা এই ঘটনায় তৎপরতার সাথে ৬০ জনের বয়ান রেকর্ড করেছে, তবে এখনো পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি।