বাংলা সিরিয়াল

‘আমি টাইপকাস্ট হয়ে গিয়েছি…খারাপ তো লাগছেই, যেরকম চাইছি সেরকম চরিত্র পাচ্ছি না’ – নিজের অভিনয় ক্যারিয়ার নিয়ে অকপটে অভিনেত্রী মিশমি রায়

বাংলা ধারাবাহিক জগতের বেশ কিছু অভিনেত্রী আছেন যাঁরা খলনায়িকার চরিত্রে অভিনয় করেন। নায়িকার ঠিক যতটা গুরুত্ব থাকে একটা গল্পে, ঠিক ততটাই গুরুত্ব থাকে একজন খলনায়কারও। কারণ খলনায়িকা না থাকলে নায়িকার একাই নায়িকা হয়ে ওঠা সম্ভব নয়। তাই একজন খলনায়িকা থাকলে তবেই নায়ক নায়িকাদের জায়গা দেখাতে পারবে।

বাংলা ধারাবাহিক জগতের এমনই অন্যতম একজন খলনায়িকা হলেন অভিনেত্রী মিশমি রায়। ক্যারিয়ারের শুরু খলনায়িকা হিসেবে না হলেও বর্তমানে তাঁকে বেশিরভাগ ধারাবাহিকে খলনায়িকা চরিত্রই দেখতে পাওয়া যায়। নিজের অভিনয়ের ক্যারিয়ার নিয়ে বিষয়ে এক বিশিষ্ট সংবাদ মাধ্যমের কাছে ইন্টারভিউ দিতে গিয়ে নিজের মনের অনেক কথায় বলেন অভিনেত্রী।

খুব স্বাভাবিক ভাবেই তাঁকে প্রথম প্রশ্ন করা হয়, ভিলেন হিসেবে জার্নি কবে শুরু হলো? খানিকটা ভেবে নিয়ে অভিনেত্রী বলেন, ‘সম্ভবত সেটা ২০১৮ সাল। এরপর মাঝে বেশ কিছুটা পজ়িটিভ চরিত্র। বম্বে গিয়েছিলাম কাজের জন্য। তারপর ২০১৯-এ কলকাতায় ফিরে আসি। সেখানে থেকেই চলছে’।

ক্যারিয়ারের শুরু ভিলেন হিসেবে না হলেও পরবর্তীকালে তাঁকে বেশিরভাগ নেতিবাচক চরিত্রই দেখা গেছে। তাই পরপর নেগেটিভ চরিত্র করাটা মানসিক প্রভাব ফেলেছিল কী? মিশমির কথায়, ‘পুরোটাই তো মেথডের উপর নির্ভর করে। অনেককেই দেখেছি যাদের উপর প্রভাব ফেলে। যদি মিশমিকে এই প্রশ্নটা করা হয়, তবে উত্তর হবে ‘না’। কারণ, দিনের শেষে সবটাই তো সুইচ অন-সুইচ অফের খেলা’।

খলনায়িকা চরিত্রের জন্য মানুষের কাছ থেকে ঠিক কতটা প্রতিক্রিয়া পান অভিনেত্রী? তিনি বলেন, ‘খুব একটা গালিগালাজ কিন্তু আমায় শুনতে হয় না। কারণ আমি শুরু করেছিলেন পজ়িটিভ দিয়ে। তাই একটা ফ্যানবেস তৈরি হয়ে গিয়েছিল। তবে হ্যাঁ, ‘রিনি’ চরিত্রটা করার সময় অনেক ব্যক্তিগত আক্রমণের মুখোমুখি হতে হয়েছে। তখন খুব খারাপ লাগত। কিন্তু ওটাতেই তো সার্থকতা’।

অভিনয়ের ক্ষেত্রে টাইপ কাস্ট হয়ে যাওয়ার একটা আশঙ্কা থাকে। তেমন কোন ভয় কী হয় না? অভিনেত্রীর কথায়, ‘আমি টাইপকাস্ট হয়ে গিয়েছি। আমার নেগেটিভ চরিত্র করার নেপথ্যে কারণ ছিল পরিবারকে সময় দেওয়া। কারণ লিড করলে সেটে অনেক বেশি সময় দিতে হয়, কন্ট্র্যাক্ট-বাউন্ড হয়ে যাওয়া… সেই কারণেই নেগেটিভ বেছে নেওয়া। এরপর একটার পর একটা নেগেটিভ এসেই যাচ্ছে’।

তাহলে এরপরেও অভিনেত্রী নেগেটিভ চরিত্রে কাজ করছেন। এমন কেন? ‘কাজের মধ্যে থাকব বলে কাজগুলো নিয়ে নিচ্ছি। তবে খারাপ তো লাগছেই, যেরকম চাইছি সেরকম চরিত্র পাচ্ছি না’।

তবে এই টাইপ কাস্টিং থেকে দূরে সরার জন্য কী করছেন তিনি? মিশমি বলেন, ‘আমাদের ‘এই পথ…’, আর ‘খেলনাবাড়ি’র লেখক সৌভিক চক্রবর্তীকে আমি বারবার করে বলেছি। আর উনি আমাকে কথা দিয়েছেন, এর পরে উনি আমাকে পজ়িটিভ চরিত্রই দেবেন। তবে কি জানেন তো, ‘রিনি’ পুরোপুরি নেগেটিভ ছিল না। কিছুটা বোকা, কিছুটা হিংসুটে’।

আজকে দিনে দাড়িয়ে অনেক বড় একটা প্লাটফর্ম। সেখানেও তো কাজ করার ইচ্ছে ছিল অভিনেত্রীর। তাহলে তার কি হল? তিনি বলেন, ‘আসলে সিরিয়ালে একবার ঢুকে গেলে টানা ছুটি পাওয়াটা খুব চাপের। আর একটা সিরিয়াল শেষ হতেই যে একটা সিরিজ চলে আসবে, এমনটা নয়। মাঝখানে কথা হলেও কাজটা শেষমেশ হয়নি’।

অভিনেত্রী নিজেই মুম্বাইয়ের শিফট করার কথা ভেবেছিলেন। তার কী হলো? তিনি বলেন, ‘শিফট করেও গিয়েছিলাম। বাবা অসুস্থ হল বলে চলে এলাম। তারপর কোভিড, লকডাউন। আপাতত, এখানেই আছি। তবে হ্যাঁ অদ্রিজা (রায়)-র মতো কোনও ভাল সুযোগ পেলে নিশ্চয়ই বাইরে যাব। (অদ্রিজা রায় সম্প্রতি হিন্দি ধারাবাহিক ‘দুর্গা অউর চারু’তে অভিনয়ের সুযোগ পেয়েছেন)।

জানা গিয়েছিল দুই দুইটি ধারাবাহিক বাদ দিয়ে তৎকালীন প্রেমিকের সাথে গোয়ায় অবসর যাপনের কথা ভেবেছিলেন মিশমি। তার কী হলো? অভিনেত্রী বলেন, ‘আর ওসব কিছু নেই’। তিনি আরো বলেন, ‘আসলে আমাদের সম্পর্কটা ভেঙে গিয়েছে’। এখানেই প্রশ্ন থেকে যায় তাহলে কী এই কারণেই কলকাতা থেকে ফিরে আসা? অভিনেত্রী স্পষ্ট জানিয়ে দেন, ‘হ্যাঁ, কামব্যাক কিছুটা সেই কারণেই। আপাতত কাজেই ডুব দিতে চাই। অনেক কিছু করা বাকি আছে যে’।

Related Articles