বাংলা সিরিয়াল

‘বাংলা টেলিভিশনের স্বর্ণযুগ ফিরে এসেছে মেয়েবেলার হাত ধরে আর বীথি ছাড়া মেয়েবেলাকে ভাবাই যায় না!’সমালোচকদের মোক্ষম জবাব ফিল্ম সমালোচক শুভদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের!

অনেক সময় কী হয় বেশিরভাগ মানুষ যে টাকে ভালো ভাবেন সেটা ভালো হয় না, আবার অনেক সময় যে জিনিসগুলো সকলের চোখে ভালো ঠেকে না, সেগুলোই বহুমূল্য হয়ে ওঠে। আসলে কোন জিনিস বা কোন কিছু ভালো বা খারাপ সেটা নির্ভর করে মানুষের রুচির উপর। কখনো দেখা যায় বেশিরভাগ সময় আমরা সাধারণ গড়পড়তা জিনিস দেখতে দেখতে সেটাকেই ভালো ভেবে বসি আর তার ব্যতিক্রম কিছু দেখতে বসলেই তার বিরোধিতা করি ইদানিং বাংলা টেলিভিশন ইন্ডাস্ট্রির ক্ষেত্রে তো এটা হামেশাই হয়। বাংলা টেলিভিশন ইন্ডাস্ট্রিতে টিআরপি বাড়ানোর জন্য ধারাবাহিকে নানান রকম মশালাদার কনটেন্ট আনা হয়, যেমন অনেক সময় দেখা যায় পরকীয়ার বিষয় আনা হচ্ছে নায়ক নায়িকার একাধিক বার বিয়ে দেওয়া হচ্ছে একাধিকবার প্রাণ সংশয় দেওয়া হচ্ছে এবং এইগুলোর মধ্যেই ধারাবাহিকের টিআরপি চড়চড় করে বাড়ছে। এখন এর ব্যতিক্রম কোন কিছু দেখলে মানুষ সচরাচর সেটিকে গ্রহণ করতে পারেন না। যেমনটা হয়েছে স্টার জলসার জনপ্রিয় ধারাবাহিক মেয়ে বেলার ক্ষেত্রে।

মেয়েবেলা বরাবরই একটি ভিন্নধর্মী ধারাবাহিক, এখানে একজন নায়ককে নিয়ে দুই নায়িকার মধ্যে মারামারি দেখানো হয় না, একজন শিক্ষিত মেয়ে হয়ে একজন বিবাহিত পুরুষকে পাওয়ার জন্য একের পর এক ঘৃণ্য কাজ করার মতো বিষয়গুলি দেখানো হয় না বরং স্রোতের বাইরে হেঁটে বাস্তবসম্মত জিনিসগুলি এই ধারাবাহিকে ফুটে ওঠে সেই কারণেই ১২ বছরের প্রেম ভুলে চাঁদনী মেনে নেয় তার প্রেমিক নির্ঝর এবং মৌয়ের সম্পর্ককে, একই সাথে সে কথা দেয় সে কোনদিনও মৌ নির্ঝরের দাম্পত্য ও বৈবাহিক জীবনের মধ্যে বাধা হয়ে দাঁড়াবে না- এক স্বচ্ছ ভাবনার বিষয়বস্তু এই ধারাবাহিক। তার মধ্যে প্রতিফলন ঘটছে, নিত্যদিন কার বাস্তবের নানান রকম ঘটনা। সংসারের নানান চরিত্র যারা টিপিক্যাল ভিলেন নয় তবুও তাদের ভিন্ন ধর্মের মানসিকতার কারণে নানান রকম সংকট প্রস্তুত হচ্ছে সংসারে এইরকম‌ই চরিত্র বীথি মাসী ও বীথি মাসি শাশুড়ি।

এক‌ইভাবে রং খেলার মধ্যে ৭ বছরের মেয়েকে কিভাবে নির্যাতন করে তারই বাড়ির লোক তা তুলে ধরা হয়েছে টিকলি চরিত্রের মধ্যে দিয়ে, মেয়েটিকে বাস্তব জীবনের অভিমুখে ফিরিয়ে আনার বদলে বাড়ি-সুদ্ধ সবাই সেই ঘটনাটিকে যেন ধামাচাপা দিতেই প্রস্তুত- এসব দেখে মনে হয় এ আমাদের নিত্যদিন কার ঘটনা। তবে এই ধারাবাহিক নিয়েও সমালোচনা হয়।

বেশ কিছুদিন আগেই, অনেকে বলেছিলেন বীথি মাসীর চরিত্রে রূপা গাঙ্গুলীর অভিনয় ভালো লাগছে না যেন মাতালের মত সংলাপ বলেন তিনি, কিন্তু বীথি মাসি চরিত্রে যে জটিল মনস্তত্ত্ব রয়েছে তা ফুটিয়ে তোলবার জন্য এরকম অভিনয়‌ই যে প্রয়োজন তা বুঝতে পারেন খুব কম মানুষই। সম্প্রতি একজন ফিল্ম সমালোচক সেই কথাই লিখেছেন।

শুভদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় নামের একজন বাংলা ফিল্ম সমালোচক মেয়েবেলার রিভিউ লিখেছেন। তিনি তার রিভিউতে স্পষ্ট লিখেছেন যে বাংলা টেলিভিশনের স্বর্ণযুগ ফিরে এসেছে মেয়ে বেলার হাত ধরে। শুভদীপবাবুর কথা অনুযায়ী,“বাংলা সিরিয়ালের সুবর্ণ যুগ যেন বহুযুগ পর ফিরে এল ‘মেয়েবেলা’ সিরিয়ালের হাত ধরে। সিরিয়াল যেভাবে বালখিল্য চিত্রনাট্য আর দৃশ্য দূষণের ভারে ভরে গেছে সেখানে পারিবারিক গল্পে এমন সাহসী বিষয় এত সুচারু ভাবে একের পর এক দেখানো তা প্রশংসনীয়।

আজকের পর্ব দেখলে চোখ সরানো যায়না

গায়ে কাঁটা দেওয়া অভিনয় Sreya Bhattacharyya টিকলি …
অসাধারণ অভিনয়ে টেলিভিশনের ভাষা বদলালো Arpan Ghoshal ডোডোর অভিনয়। সাথে অবশ্যই Sawon Chakraborty টিটো এবং অবশ্যই Swikriti Majumder মৌ। নতুন যুগের অভিনেতারা সিরিয়ালের সংজ্ঞা বদলাচ্ছেন।

চিত্রা সেন, Roopa Ganguly Ratna Sarkar থেকে Subhrajit Datta Mimi Dutta এঁনাদের অভিনয় দেখতেই তো শুরু করেছিলাম দেখা। মন ভরিয়ে দিচ্ছেন। কিন্তু নতুনদের অভিনয়ও দুরন্ত। কারা আবার খবর লিখেছিল রূপা গঙ্গোপাধ্যায়ের বদলে নাকি ইন্দ্রাণী হালদারকে আনা উচিত। দ্রৌপদীর বীথি ছাড়া ভাবা যায়না ‘মেয়েবেলা’। ‘অন্তরমহল’ এর বড় বউ মহামায়া যেমন রূপা ছাড়া হতনা বুঝেছিলেন ঋতুপর্ণ ঘোষ।

‘মেয়েবেলা’র গল্পকার দেবিকা মুখোপাধ্যায়,পরিচালক Suman Das ও চিত্রনাট্যকার Shanoli Debnath এভাবেই শিক্ষিত চিত্রনাট্যে রুচি সম্মত গল্প বলা বজায় রাখুন।

অনেক বছর পর টেলিভিশনে এত সিরিয়াস অভিনয়ের সমাহার দেখে ‘কুয়াশা যখন’, ‘এক আকাশের নীচে’,’প্রতিবিম্ব’,’খেলা’ র সময়রেখা মনে পড়ছে।”

এই বিষয়টিকে সমর্থন করে আরেকজন আবার লিখেছেন,“বহুযুগ পর, আমরা সেই ৯০ এর শেষ আর ২০ দশকের সময় স্বাদ টা পেলাম, তবে হ্যাঁ, হা করে তাকিয়ে থাকতে হয় চিত্রা সেন আর রূপা গঙ্গোপাধ্যায় এর অভিনয়ে দেখে।”

Related Articles