বাংলা সিরিয়াল

একটা সময় ডিপ্রেশনে ভুগছিলেন, তবে এখন লোকের গালাগাল খেতে ভালোবাসেন মানসী! হলোটা কি! মাথাটা গেল নাকি পর্না বড় জা মানসীর?

বাংলা টেলিভিশনে নায়ক নায়িকাদের মতোই সমানতালে যে চরিত্রটি দর্শকদের সমালোচনায় উঠে আসেন তিনি হলেন খলনায়ক অথবা খলনায়িকা। তবে বর্তমানে আর সেই ভাবে বড়পর্দায় খলনায়ক খলনায়িকা দেখতে পাওয়া না গেলেও ছোট পর্দায় ভীষণ ভাবে দেখা যায়।

আর তাদের মধ্যেই একেবারে জাদরেল খলনায়িকার কথা যদি ওঠে অবশ্যই মানসী সেনগুপ্তর (Manashi Sengupta)নাম আসবেই। তার নেতিবাচক চরিত্রে অভিনয় মন কেড়েছে দর্শকদের। বর্তমানে নিম ফুলের মধু ধারাবাহিকে মৌমিতার চরিত্রে অভিনয় করছেন মানসী। যতই ভাল মানুষই করে থাকুক না কেন মনে মনে সব সময় প্যাচ কষে যাচ্ছে কিভাবে ছোটো জায়ের সংসার ভাঙানো যায়।

তবে একটা সময় অবসাদ ঘিরে ধরেছিল তাকে। সেই নিয়েই খোলাখুলি এক আড্ডায় ধরা দিয়েছেন পর্নার বড় জা। সম্প্রতি হিন্দুস্থান টাইমসের বাংলার তরফে তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। প্রশ্ন রাখা হয় টিভির পর্দায় নেগেটিভ চরিত্র অভিনয় করে মানসীর চোখে মৌমিতা বাকি খলনায়িকাদের থেকে কতটা আলাদা? সরাসরি জানান,’আমি কোনও চরিত্রকেই ঠিক নেগেটিভ বলতে রাজি নই, বরং গ্রে শেডের চরিত্র বলি। আমি ব্যক্তিগতভাবে গ্রে শেডের চরিত্র করতে ভালোবাসি।

এর আগেই জি বাংলা-তে আমি বিন্দির (পিলু) চরিত্রে কাজ করেছি। সেখানে বিন্দি খুনও করেছে, বড় বড় ক্রাইম করেছে। সেই অর্থে মৌমিতা কিন্তু ভিলেন নয়। আমরা আমাদের ঘরে মৌমিতাকে দেখতে পায়, আমাদের চারপাশে আমরা মৌমিতাদের দেখতে পাই। সেইজন্যই কিন্তু আমি এই চরিত্রে অভিনয়ে রাজি হয়েছি। মৌমিতা পড়াশোনা না জানা একটা মেয়ে, এই বনেদি বাড়িটা নিজের কব্জায় করতে যায়। সে চায় নিজের স্বামী-সন্তানকে নিয়ে ভালো থাকতে। সে শুধু নিজের ভালোটাই চায়। হয়ত আমাদের আশেপাশের সব মানুষ মৌমিতা নয়, তবে অনেকেই কিন্তু মৌমিতা’।

তবে পরপর নেতিবাচক চরিত্রে অভিনয় করে অনেক খারাপ কথা শুনতে হয়। সেই ব্যাপারে কতটা খারাপ লাগার থাকে তার? জানালেন এটা তার অভ্যাসে দাঁড়িয়ে গেছে। এখন সাধারণ কোন ছবি শেয়ার করলেও সেখানে নেতিবাচক মন্তব্য আসতেই থাকে। ঘরের লোক যেন শুনতে শুনতে অভ্যস্ত। তবে পুরো ব্যাপারটাকে বেশ উপভোগ করেন কারণ তার অভিনয় ভালো হচ্ছেন বলেই না লোকে এতটা গ্রহণ করছে তাকে। তবে ভিলেন চরিত্রই তাকে এনে দিয়েছে সেরার পুরস্কার।এবার জি বাংলা সোনার সংসারে ভিলেন ক্যাটাগরিতে দুটো মনোনয়ন পেয়েছেন তিনি। তাই নিজের কম্পিটিটর নিজেই মানসী।

তবে এইরকম চরিত্রে অভিনয় করার জন্য কম সমালোচনার মুখে পড়তে হয়নি তাকে। ঘটে গিয়েছে বিভিন্ন অপ্রীতিকর ঘটনা। জানালেন একবার গ্রামের মফস্বলে শো করতে গিয়ে মৌমিতাকে দেখে লোকজন এগিয়ে আসে। গালাগালি দিয়ে মুখ ঘুরিয়ে চলে যায়। একবার বিয়ে বাড়ি গিয়ে বেজায় বিপদে পড়েছিলেন তিনি। নিজের পিসির ছেলের বিয়ে সেখানে গ্রামের লোকজন এসে সেলফি তুলছে। আবার কেউ মুখের ওপর বলে দিল ,’বাবা এর সঙ্গে কি ছবি তুলব মুখটা দেখছো না যা বদমাইশি করে বেড়ায়’। হাসি লাগে তার। বাচ্চারা তাকে দুষ্টু আন্টি বলে ডাকে। লোকে বলে সে সবার সংসার ভেঙে বেড়ায়। তবে শহরতলীতে মানুষ তাকে বেশ আপন করে নেয়।

বিনোদন জগতের আসা কেমন ভাবে? অভিনেত্রী নিজেই জানিয়েছেন চ্যানেলে এংকারিং করতেন তিনি। তখন কিছু বন্ধু তার টেলিভিশনে কাজ করছিলেন। এক বান্ধবীকে জানিয়েছিলেন তিনি সিরিয়ালে কাজ করতে চান। অডিশন দিয়ে ডাক আসে মেম বউ ধারাবাহিক থেকে। সেই থেকে কুঞ্জ ছায়া তারপর টানা ছয় বছর জি বাংলায় কাজ।

তবে মায়া নগরীতে কাজ করার অভিজ্ঞতাও রয়েছে। হঠাৎ করে সেখান থেকে কাজ ছেড়ে দিয়ে চলে আসেন মানসী। জানান ভীষণ ঘরে থাকতে ভালোবাসেন। পাশাপাশি হিন্দি বলা একটু শিখতে হয়। সেখানকার যিনি প্রোডাকশনের কাজ করতেন তারা তাকে হিন্দি বলার সুযোগ করে দিয়েছিল। ওয়ার্কশপে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছিল। তবে যে রাজ্য থেকে এসেছেন সেই রাজ্য থেকেই কাজ করতে চেয়েছিলেন। বাজেট ছাড়া হিন্দি আর বাংলা ধারাবাহিককে বিশেষ কোনো ফারাক নেই দাবি অভিনেত্রীর।

তবে হঠাৎ করেই মায়া নগরী ছেড়ে দেন কারণ পরিবারকে মিস করছিলেন তিনি। মিস করছিলে নিজের কাছের মানুষগুলোকে। এতটাই মিস করছিলাম যে ডিপ্রেশনে ভুগতে হচ্ছিল তাকে। রীতিমতো কাউন্সিলিং করাতে হয়েছে। তাই সনি চ্যানেলের মেকার কাজ শেষ করেই বন্নি চাও হোম ডেলিভারির কাজ মাঝপথেই ফেলে চলে আসেন তিনি।

কিন্তু এখন ভালো আছেন সবকিছু ঠিক আছে এখন। নিজেকে আশীর্বাদ ধন্য মনে করেন কলকাতাতে ফিরেই পিলু কাজে ডাক পান তিনি। একইসঙ্গে পর্না যার সঙ্গে সব সময় শয়তানি করে যাচ্ছে মৌমিতা তার সঙ্গেও মর্নিং জানালেন দারুণ ভালো। কে আপন কে পর ধারাবাহিক ও কাজ করেছিলেন দুজনে। তবে তুলনায় পল্লবী কম কথা বলে। তারপরেও দুজনে মজা করে কাজ করে।

এই বয়সে এতটা সফল অভিনেত্রী ভবিষ্যৎ নিয়েও বেশ চিন্তিত। নিজেকে পাঁচ বছর পর দেখতে চান প্রতিষ্ঠিত এক জায়গায়। ধারাবাহিকের পাশাপাশি কাজ করতে চান ওয়েব সিরিজ ছবিতেও। কিছুর পরেও জানিয়ে দিলেন টেলিভিশন কোনভাবেই ছাড়বেন না তিনি। ওটা ছাড়া বাঁচবেন না পর্দার মৌমিতা।

Related Articles