Stories

জুটে ছিল হাজার অপমান, লাঞ্ছনা, তারপরেও নিজের জেদের বশে আজ নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে তুলেছেন বাংলা টেলিভিশন জগতের জনপ্রিয় এই খলনায়িকা

বাংলা ধারাবাহিকে নায়ক নায়িকারা যতটা গুরুত্বপূর্ণ, ঠিক ততটাই গুরুত্বপূর্ণ খলনায়ক এবং খলনায়িকারা। বাংলা ধারাবাহিকের খলনায়িকা চরিত্রে বহু বছর ধরে অভিনয় করে আসেন জনপ্রিয় অভিনেত্রী চৈতালি চক্রবর্তী। জন্মভূমি ধারাবাহিকের হাত ধরে প্রথম আত্মপ্রকাশ করেন চৈতালি, এরপর একের পর এক ধারাবাহিকে খলনায়িকার চরিত্রে দুর্দান্ত অভিনয় করে গিয়েছেন তিনি।

তার দুষ্টুমিতে রীতিমত ভয় কাটা হয়ে থাকতেন দর্শকেরা। রাক্ষসী চরিত্রেই হোক কিংবা দর্জাল শাশুড়ির চরিত্র নিজেকে দুর্দান্ত ভাবে পর্দায় ফুটিয়ে তুলেছেন অভিনেত্রী। তবে সাফল্য দুদিনে আসেনি বহু বছর কঠোর পরিশ্রমের পর তিনি এই জায়গায় এসেছেন আজকে।

অভিনেত্রীর রক্তে রয়েছে অভিনয়। ছোট থেকে অভিনয়ের মধ্যে থেকেই বড় হয়ে ওঠা। অভিনেত্রীর ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন ছিল তিনিও একদিন অনেক বড় অভিনেত্রী হবেন। তার দিদিমা দিপালী চক্রবর্তী ,মা শেলী পাল, বাবা পরিতোষ পাল সকলেই ছিলেন বিখ্যাত নান্দীকার নাটদলের সদস্য।

তবে অভিনয়ের সঙ্গে ছোট থেকেই রক্তের সম্পর্ক থাকার পরেও একাধিক বাধা-বিপত্তি বেরতে হয়েছে অভিনেত্রীকে। অভিনয়ের জন্যই শাওলি মিত্রের ‘পঞ্চম বৈদ্যিক’ দলে যুক্ত হন তিনি। প্রথমে পাঁচ বছর তাকে অভিনয়ের সুযোগ দেওয়া হয়নি। তিনি বড়দের ফাই ফার্মাস খাটতেন, এছাড়া আলোর ডিমের ঠেলতেন, শতরঞ্চি পাততেন, আর অভিনয় করার সুযোগ না পেয়ে কাঁদতেন।

এরপরই অজিতেশ নাট্য একাডেমীর ‘তিন পয়সার পালা’ নাটকে অভিনয় করে দর্শকদের মন জয় করে নেন তিনি। অতিরিক্ত সুন্দরী না হওয়ার কারণে গায়ের রং চাপা হওয়ার কারণে বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে বিভিন্ন ধরনের কটুক্তি শুনতে হয়েছে তাকে। কিন্তু এইসব বিষয়ে তিনি কখনোই বিশেষ মাথা ঘামাননি।

তবে তার জীবনে একটা আফসোস রয়ে গেছে। তিনি প্রখ্যাত পরিচালক বুদ্ধদেব দাশগুপ্তর ‘লাল দরজা’ ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ পেয়েও সেই সুযোগ হারাতে হয়েছে তাকে। কারণ সেইসময় তিনি গর্ভবতী ছিলেন। তার মেয়ে বড় হয়ে এই কথা শুনে তাকে বলেছিল “ওহ মাই গড! তুমি অ্যাবরশন করিয়ে নাওনি কেন?” তখন চৈতালি মেয়েকে জানিয়েছিলেন তারা মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে স্বপ্ন পূরণ এর জন্য নিজের সন্তানকে হত্যা করা পাপ বলেই মনে করেন তিনি।

এরপরেও তার জীবনে বহু বাঁধা বিপত্তি এসেছে। স্বামীর সঙ্গে তার ডিভোর্স হয়ে গেছে। মেয়েকে তিনি একাই বড় করেছেন। অভিনয় জগতে ধীরে ধীরে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। নিজের রোজগারের টাকায় ফ্ল্যাট কিনেছেন, পছন্দের গাড়ি কিনেছেন। তাই আজ যখন সহকর্মীদের মধ্যে কেউ ‘রাক্ষসী’ বলে তাকে কটাক্ষ করে তখন তিনি জবাব দেন, “ভাগ্যিস! ওই কারণেই তো এখনও কাজ করছি।”

Related Articles